চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজজি করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরের পরে রাবি ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে।
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত জেমস, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ও আইবিএ ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা, তামিম ও রাজ নামের দুই ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃত্বে এই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে জিম্মি হওয়া ভুক্তভোগীরা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওকিবুল হক, ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অংকুর পাল ও ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির বিজনেস ম্যানেজমেন্টের জুনায়েদ ইফতি।
জানা যায়, রাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোর দায়িত্বে থাকা ঐ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভুক্তভোগীরা ময়মনসিংহ থেকে ৭ টি বাসে করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে আসে। একই জেলা থেকে জিয়া হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাকিবও বাস নিয়ে আসে। ভুক্তভোগী চবি শিক্ষার্থীর জন্য লাভ কম হয় রাকিবের। তাই সে ছাত্রলীগ নেতা জেমসের মাধ্যমে চবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী অংকুর পাল বলেন, আমরা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে থাকি। যথারীতি রাবির ২৫ তারিখের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ থেকে ভোর ৫ টায় এই ক্যাম্পাসে আমাদের বাস নিয়ে আসি। দুপুরের পর ড্রাইভাররা আমাদের ফোন দিয়ে বলে কিছু লোক তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে টাকা দাবি করে। আমি তাওকিবুল ও ইফতি সেখানে যাই। ভীড়ের কারনে আমাদের একটু দেরি হয় কিন্তু ইফতি আগে সেখানে পৌঁছালে তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে যায়। এবং টিচার্স কোয়াটারের পেছনে অবরুদ্ধ করে রাখে। আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের বন্ধুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরে অভিযুক্তরা আমার বন্ধুর ফোন নাম্বার থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তারা বিকাশে আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমরা সরাসরি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেই এবং পুলিশকে বিষয়টি জানাই। তামিম নামে একজনকে তারা আমাদের নিকট টাকা নিতে পাঠায়। পরে ভিসির বাস ভবনের সামনে থেকে তামিমকে পুলিশ আটক করে। এরপর বন্ধবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসের নেতৃত্বে তাওকিবুলের বিকাশ ও নগদ থেকে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পিন নম্বর আদায় করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। তারা আরো টাকা নেয়ার জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশকে আমরা পাশে পাইনি এবং অভিযুক্ত কাউকে আটকও করেনি। এরপর আমি ও ইফতি চলে আসি। তাওকিবুলকে মিমাংসার জন্য তারা রেখে দেয়।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অংকুর বলেন, এমন ঘটনায় আমরা রীতিমতো হতাশ। রাবি ছাত্রলীগ নেতারা এমন আচরণ করবে আমরা কল্পনাও করিনি। আমি নিজেও ছাত্রলীগ করি এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সবাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। ছাত্রলীগের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এমন চাঁদাবাজি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার। ছাত্রলীগ আমাদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দেয়নি। পুলিশ ও রাবি প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। আমরা এর তদন্তপূর্বক বিচার চাই।
অভিযুক্ত রাবি ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম জেমসের ফোনে একাধিক বার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে আরেক অভিযুক্ত জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামকে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
জেমসসহ ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, শুনেছি জিয়া হলের রাকিবের স্কুলের ছোট ভাইয়ের সাথে একটি ঝামেলা হয়েছে পরে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।
এবিষয়ে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযুক্ত জেমস ও ভুক্তভোগীদের সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছি।