জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৯ জন কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার(২৪ফেব্রুয়ারি) রাত দুইটার দিকে হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী সাকিবুল ইসলাম ফারাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- একই হলের ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আহমেদ আক্তার উৎস ও সালেক ইবনে ইউসুফ কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, বায়োকেমেস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ইমরান মির্জা এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (৪৮তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্র দাবি করা হয়, গত শুক্রবার রাত দুইটার দিকে হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে অবস্থানরত ৪৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ২১৯ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী সাকিবুল ইসলাম ফারাবিকে সামনে ডেকে প্রোগ্রামে না থাকার কারণ জানতে চাওয়া হয়। পরীক্ষা থাকায় যেতে পারেননি জানালে উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে সাকিবুলের দিকে তেঁড়ে যান। পরে তারা সাকিবুলের শার্ট খুলতে বলেন, তবে সে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর অভিযুক্তরা তাকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করেন। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। ফলে সারারাত হলের গেস্টরুমেই রাত্রিযাপন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাকিবুল ইসলাম ফারাবি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ডেকে নিয়ে প্রোগ্রামে না থাকার কারণ জানতে চায়। আমার পরীক্ষা চলছিল, তাই প্রোগ্রামে থাকতে পারিনি বলে জানিয়েছিলাম। তখন তারা উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেঁড়ে আসে এবং এলোপাতাড়িভাবে মারতে থাকে। এছাড়া পরবর্তীতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না থাকলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তারা।’
তবে অভিযুক্তরা বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। অভিযোগকারী সবসময় নেশাগ্রস্থ থাকে এবং রুমমেটদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এ জন্য তাকে রুম পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দিই। তখন সে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তাই আমরা তাকে বুঝিয়ে রুম ত্যাগ করতে বলি। তাকে কোনোরকম মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি।’
এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, ‘চড় থাপ্পড়ের আওয়াজে রুম থেকে উঠে এগিয়ে যাই। তখন দেখি ৪৮ ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়েরা ফারাবিকে মারধর করছে। পরে তাকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ছাত্রলীগ র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তাই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে কেউ অভিযোগ জানায়নি। তবে শুনিেছ যে, সিনিয়র-জুনিয়রদের সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। হল প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি তারা ব্যবস্থা নিবে।’