কাগজে কলমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন ভবনের নাম থাকলেও ভবনগুলোর কোথাও নেই নামফলকের চিহ্ন। সাড়ে সাত একরের এই ক্যাম্পাসে তাই অনেক শিক্ষার্থীই জানে না ভবনগুলোর নাম। এতে বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে চলতি মাসের ৩০ তারিখ থেকে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। নামফলক না থাকায় ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সিট খুঁজে পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক পেরিয়ে বাম দিকের ১৩ তলা নতুন ভবনটির নাম ‘নতুন একাডেমিক ভবন’, তবে অনেক শিক্ষার্থীই ভবনটিকে ‘বিবিএ ভবন’ নামেও চিনে। কিন্তু ভবনটির কোথাও এর নাম লেখা নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের বিপরীতে লাল রংয়ের দ্বিতল ভবনটির নাম ‘বজলুর রহমান মিলনায়তন’ হলেও ভবনটির কোনো নামফলক নেই। এই ভবনের নামটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই অজানা। বজলুর রহমান মিলনায়তন পেরিয়ে বামদিকে কলাভবন এবং ডানদিকে দুটি সামাজিক বিজ্ঞান ভবন। কলা ভবনের নামফলক থাকলেও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের নামফলক নাই। এমনকি সামাজিক বিজ্ঞানের কোনটি ১ আর কোনটি ২ সেটিও জানে না শিক্ষার্থীরা।
খোদ উপাচার্য ভবনের নাম ও জানে না অনেক শিক্ষার্থী। কেউ বলে ভিসি ভবন কেউবা জানেন রেজিস্ট্রার ভবন নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থিত শহীদ মিনারের বামে ভাষাশহীদ রফিক ভবন। এই ভবনটিতে শুধু রয়েছে নামফলক, তাও শুধুমাত্র রঙের কালিতে লেখা। এমনকি এটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। এছাড়াও রফিক ভবন পেরিয়ে বামদিকে শুরু হয় বিজ্ঞান অনুষদ। বিজ্ঞান অনুষদে বিভিন্ন বিভাগের নাম থাকলেও ভবনের কোনো নাম নেই। বিশ্ববিদ্যায়ের চতুর্থ গেট দিয়ে প্রবেশ করতে যে ভবনটি প্রথমেই পড়ে তার নাম ‘ইউটিলিটি ভবন’। ভবনটিতে রয়েছে শুধু ২০১২ সালের উদ্বোধন করা ছোট ফলকটি।
সমাজকর্ম বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর নাম না থাকায় বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট বিভাগ খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়। বজলুর রহমান মিলনায়তন চেনেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই নামে কোনো ভবন আছে তা আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম।
বাবার সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ইউছুব ওসমান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেবো৷ তাই আগেই ঘুরে দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে তো দেখছি কোনো ভবনেরই নাম নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সব ভবনেই নাম দেখা গেছে।
প্রফেশনাল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী ইউনুস আলী জানান, ক্যাম্পাসে এসে রেজিস্টার ভবনই খুঁজে পাচ্ছি ন। অনেককে জিজ্ঞেস করেও পেলাম না সদুত্তর। তারপর অনেক কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ৩০ তারিখ থেকে গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু হবে, আমি বিষয়টি প্রকৌশল দপ্তরে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের নাম তো চাইলেই দেয়া যাবে না। নামগুলো সিন্ডিকেটে পাস হয়ে এলে তারপর নামফলক দেয়া যাবে। আমি সামনের সিন্ডিকেটে এই বিষয়টি তুলে ধরবো।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে অবগত করলে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।