গত বছর রাজশাহী, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার বায়েজিদ নামে এক প্রক্সি দেওয়া পরীক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জালিয়াত চক্রের মূল হোতা তন্ময়। তবে তথ্য পেলেও জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে গড়ে ওঠা একটি ভর্তি জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবষের্র ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় এই চক্র। শুধু রাজশাহী নয়; ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেয় চক্রটি।
গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগের র্যা বের কাছে হাতেনাতে আটক হয় ৪ জন।
এর মধ্যে বায়েজিদ নামের এক প্রক্সি পরীক্ষার্থী জানান, তিনি চক্রের নেতা তন্ময় নামে একজনের হয়ে কাজ করেন। চক্রের আরেক সদস্যও জানান, রাবির ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তন্ময়ের হয়ে কাজ করেন আরও অনেকেই।
অনুসন্ধান বলছে, গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ছবি পরিবর্তন করে প্রক্সির মাধ্যমে ট্রিপল-ই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহান মাহিন ‘সি’ ইউনিটের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আলিফ হোসাইনকে চান্স পাইয়ে দেন। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী ফিশারিজ বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিশির ইয়াসির আরাফাতের হয়ে পরীক্ষা দিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এবং নজরুল ইসলামকে ফোকলোর বিভাগে ভর্তির সুযোগ করে দেন। আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ আল শামস তামিমের হয়ে পরীক্ষা দিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেন।
এছাড়া এই চক্রের মাধ্যমে ‘সি’ ইউনিটে অনিক এখতিয়ার মারুফ ও আদনান হোসাইন মাহিন এবং ‘বি’ ইউনিটে গোলাম সারওয়ার কবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক’ ইউনিটের সিফাত উন নূর ও গুচ্ছতে সুলতানুল আরেফিনের পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাইয়ে দেন মাহিন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডি’ ইউনিটে মিজানুল ইসলাম শাওন ও তাজ উদ্দিন আহমেদ, ‘বি’ ইউনিটে সাগর আহমেদকে ভর্তির সুযোগ করে দেয় চক্রটি। জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক বছর পার হলেও শেষ হয়নি তদন্ত।
র্যাব ব-৫, রাজশাহীর উপঅধিনায়ক মেজর হাসান মাহমুদ জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জালিয়াত চক্রের প্রলোভনে পড়ে বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে অনেকের ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবিরা।
- সূত্র: নিউজ২৪