ঢাকা৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ভেজাল খাদ্যে জীবন বিনাশ

bdcampus
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ ১০:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

সুমাইয়া আক্তার শিমু

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহন করতে হয়,আর ভেজাল খাদ্য গ্রহনে জীবন নাশ হয়।বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা গুলোর ভিতর খাদ্যে ভেজাল অন্যতম এবং এটি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।সাধারনত অসাধু ব্যাবসায়ীরা এই কাজ গুলোর সাথে জড়িত।যখন কোন সঠিক খাবার বা উৎকৃষ্ট খাবারের সঙ্গে খারাপ খাবার নিকৃষ্ট খাবার মেশানো হয় তাকে খাদ্যে ভেজাল বলে। ভেজাল আইনি শব্দ।যার অর্থ মিশ্রিত,মেকী বা খাঁটি নয় এমন। যে খাবার মানসম্মত নয়,স্বাস্হকর নয় এবং স্বাস্থের জন্য অধিক ক্ষতিকর সেটাই “ভেজাল খাদ্য”। ভেজাল খাদ্য  মানব জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। বর্তমানে ভেজালের প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল মহামারি আকার ধারণ করেছে। খাদ্যে ভেজাল এর কারন গুলো হল;

১। অধিক মুনাফা লাভের আশা
২। তদারকির অভাব
৩। আইনের যথাযথ প্রয়ােগ না হওয়া
৪। নৈতিকতার অভাব
৫। খাদ্য পরিবহণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থার অভাব
৬। ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ।

সাম্প্রতিক কালে, দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। ভেজাল খাবার এবং নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবন কিডনি রোগ বাড়িয়ে তুলছে। অতিরিক্ত ওষুধ সেবনও কিডনি রোগ প্রসারের অন্যতম কারণ।

শস্য ও সবজিতে কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভের ব্যবহারের কারণে খাদ্যে হেভি মেটাল অ্যালমিয়া, অ্যাডমিয়া বা অর্সেনিকের প্রবেশ ঘটছে। অনেকদিন এসব বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্রনিক কিডনি রোগ দেখা দিচ্ছে। ‘বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারকরণে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা প্রকল্প’ বিষয়ক নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে আয়োজিত এক কর্মশালায় পাঁচটি পৃথক গবেষণায় বেশকিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা দেশের জন্য ভীষণ উদ্বেগজনক। গবেষণায় দেশের উত্তরাঞ্চলের চাল, বাদাম, ভুট্টার ৬০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতে যকৃত ক্যান্সারের জন্য দায়ী অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসবের চারটিতে ছিল নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদর্শ মাত্রার বেশি অ্যাফ্লাটক্সিন থাকলে তা হতে পারে ক্যান্সার ও কিডনি রোগের কারণ। ২০২১ সালজুড়ে পরিচালিত এ গবেষণায় বাদাম ও ভুট্টাতে বিষাক্ত পদার্থের বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ময়মনসিংহের কিছু এলাকার গরুর দুধে সামান্য পরিমাণে অ্যামোক্সিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান মিলেছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লইট্টা শুঁটকিতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকারক ‘ই কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া।

গবেষণা অনুসারে, ৪৫টি নমুনার ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। আর ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ঈশ্বরগঞ্জ থেকে সংগ্রহকৃত প্রস্তুত দুগ্ধজাত খাবারে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখা যায়।

গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ শসা, ১০ শতাংশ টমেটো ও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ গাজরে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, আইসক্রিম এবং ৪ শতাংশ দইয়ে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই।

খাদ্য ভেজাল প্রতিরােধ

খাদ্যে ভেজাল একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। কাজেই যেকোনাে মূল্যে ভেজালের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। খাদ্যে ভেজালের প্রতিকার ও করণীয় সম্পর্কে আলােচনা করা হল–
১. আইনী কাঠামাে ও প্রয়ােগ : খাদ্য ভেজাল রােধের জন্য যুগােপযােগী আইন প্রণয়ন অথবা প্রচলিত আইনের সংশােধন করতে হবে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ .(সংশােধিত ২০১৫), নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর যথাযথ প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়ােগের জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে হবে।

২. পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নির্ণয় : প্রচলিত মানদন্ড ও নিবন্ধীকরণ প্রক্রিয়া সংশােধন করতে হবে। মানব স্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পণ্য আইএসও (ISO) কর্তৃক যাচাই করতে হবে।
৩. খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গঠন : প্রতিবেশী বা আঞ্চলিক দেশ সমূহের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরবরাহ, বিনিময় ও মান নির্ণয়ে নিরাপত্তা বলয় গঠন করতে হবে। প্রয়ােজনে WFO, ISO, WHO এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থার সহসযােগিতা নেয়া যেতে পারে।
৪. সুশীল সমাজের দায়বদ্ধতা : খাদ্যে ভেজাল প্রতিরােধে সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভােক্তা সমিতি, বিভিন্ন বণিক সমিতি ও পরিবেশবাদী সংগঠনকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৫. কারিগরি দক্ষতা ও অবকাঠামাে বৃদ্ধি : বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষণ ইন্সটিটিউট (BSTI), ভােক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (TCB), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালী করে সম্প্রসারিত করা উচিত। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরােধে একটি যুগােপযােগী নিয়ন্ত্রক সংস্থা একান্ত জরুরি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মুক্ত হতে হবে। সর্বোপরি দেশের জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। আইনের প্রয়ােগ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থী:সুমাইয়া আক্তার শিমু
লোক প্রশাসন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়