রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১:৪৫ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। আলোচক হিসেবে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। এতে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে বারুদ আর রক্তমাখা বিভীষিকাময় রাজনৈতিক হত্যাযষ্ণের দিন। আজ এই নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান দলের ২৪ নেতৃকর্মী, পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় অনেককে। ঘাতকচক্রের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করা এবং এর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া। পরিশেষে দেশে স্বৈশাসন ও জঙ্গীবাদকে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেই নারকীয় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে সেই অপচেষ্টা রুখে দেয়।
আলোচকগণ আরো বলেন, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সে সময়ের সরকার তা করেনি। বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকেই এই বিভীষিকাময় কর্মকাণ্ডের বিচারে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে মামলার রায় কার্যকর করার জন্য বক্তাগণ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তাঁরা আরো বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিরোধ চক্র এখনো নানানভাবে সোচ্চার আছে। এই অপশক্তির যেকোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলের প্রতি তাঁরা আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার শুরুতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। এখানে অন্যদের মধ্যে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যও বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে উপাচার্য বলেন, ‘আজকের এই শোক, শক্তিতে পরিণত হোক। বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ রক্ষা করতে হলে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে। পরাজিত শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
রাবির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায়, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি ফায়েকউজ্জামান, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধানসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক- শিক্ষিকা এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।