রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে নির্যাতনের পর মেরে ‘শিবির’ বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক মো. সোলাইমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিলসহ চার দফা সুপারিশ করেছে কমিটি।
মঙ্গলবার (২৮ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, কমিটিতে থাকা সদস্যরা সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্ত করেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। হল প্রশাসন এ তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
তদন্ত কমিটি কৃষ্ণ রায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চারটি বিষয়ে সুপারিশ করেছে। সুপারিশে বলা হয়েছে-
১. অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা দীর্ঘকাল হলে অবস্থান করলেও হলের আবাসিকতার জন্য কখনো আবেদন করেননি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এর আগেও বহু মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকী অভিযুক্ত নাইম আলী একাধিকবার হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি অবৈধভাবে হলের সিট দখল, বৈধ শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগে বাধ্য করা, হলের সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাধা দেওয়াসহ নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত। এছাড়া হলের আবাসিক শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, অসৌজন্যমূলক আচরণসহ প্রাধ্যক্ষকে দেখে নেবো বলে বহুবার হুমকি দিয়েছেন।
২. কৃষ্ণ রায়ের ঘটনাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘকালের সুনাম ও ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই কোনোভাবেই যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও কঠোর ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। এজন্য অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেছেন তারা। তা না হলে এমন আরও অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটবে।
৩. অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়িতদের সঠিকভাবে উদঘাটন করা যায়নি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা গেলো না।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা, সুনাম ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে অনাবাসিক এই দুই শিক্ষার্থীকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিকতা না দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৮৩ নম্বর কক্ষে কৃষ্ণ রায়কে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় কৃষ্ণ রায় ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন।