বাংলাদেশকে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার জন্য সাকিব আল হাসানের অবদান অপরিসীম। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে সাকিব আল হাসানের যাত্রা অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প।
সাকিব আল হাসানের জন্ম ২৪ মার্চ ১৯৮৭ সালের মাগুরা জেলায়। তার পিতা মাশরুর রেজা ও মাতা শিরিন শারমিন। তার ডাক নাম সাকিব,ময়না ও ফয়সাল। উচ্চতা ৫’.৯”। তিনি বামহাতি ব্যাটসম্যান ও স্লো বামহাতি অর্থোডক্স বোলার। তিনি একজন অলরাউন্ডার । সাকিব আল হাসানের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল মাগুরায়। তারপর বিকেএসপিতে । ২০২৩ সালে তিনি এআইইউবি থেকে স্নাতক সম্মান লাভ করেন। সাকিব আল হাসান বিয়ে করেন ২০১২ সালের ১২ ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরকে। বর্তমান তাদের ঘরে তিনটি সন্তান দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। তার বড় মেয়ের নাম আলাইনা হাসান অব্রি, ছোট মেয়ের নাম ইররাম এবং একমাত্র ছেলের নাম ইজাহ আল হাসান।
কিশোর বয়সে, সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং শীঘ্রই তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। তিনি দ্রুত একজন প্রতিভাবান অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
জাতীয় দলে সাকিবের প্রথম বছরগুলো ছিল চ্যালেঞ্জিং। কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেট দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। এতে সাকিবের প্রতিভা এবং দৃঢ় সংকল্প লক্ষ্য করা যায় । তিনি তার খেলায় কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান।
২০০৯ সালে, সাকিবের কঠোর পরিশ্রম প্রতিফলিত হয় যখন তিনি ICC ওডিআই প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পান। তিনি ২০১১ সালে আরেকটি আইসিসি ওডিআই প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরষ্কার অর্জন করেন। যা বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসেবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
মাঠে সাকিবের সাফল্য ব্যাটিং ও বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই। তার ব্যতিক্রমী দক্ষতার জন্য এ সফলতা। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনুপ্রেরণা এবং ভরসা । এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ওডিআই খেলেছেন ২৩০টি ; রান করেছেন ৭,০০০+ এবং উইকেট নিয়েছেন ৩০০+টি। টেস্ট খেলেছেন ৬৫ টি; রান করেছেন ৪,৩৬৭ এবং উইকেট নিয়েছেন ২৩১টি। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ১০৯ টি; রান করেছেন ২,২৪৩ এবং উইকেট নিয়েছেন ১২৮ টি। এছাড়া তার সেঞ্চুরি আছে ১৪ টি এবং হাফ সেঞ্চুরি আছে ৯৫ টি। তিনি বর্তমান ওডিআই ও টি টুয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার এর স্থান ধরে রেখেছেন। দেশের ক্রিকেট ছাড়াও তিনি বিশ্বের নানা রকম প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট লীগ গুলো খেলে থাকেন যেমন আইপিএল , বিপিএল, সিপিএল এসপিএল, বিগব্যাশ ইত্যাদি। এসব লীগেও সাকিবের অনেক রান, উইকেট এবং রেকর্ড রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছাড়াও, সাকিব বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের অনেক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি টেস্ট এবং ওডিআই উভয় ক্রিকেটেই একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় । এবং তার পারফরম্যান্স প্রায়শই জয় এবং পরাজয়ের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি তিনি একজন ব্যবসায়ী । তিনি জনসেবামূলক অনেক কাজ করে থাকেন। ক্যান্সার রোগীদের জন্য তার একটি সহযোগিতা সংস্থা আছে। নানা রকম সংস্থার তিনি দূত হিসেবে কাজ করেন । এছাড়া তিনি বিজ্ঞাপনের অভিনয় করেন।
বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে সাকিবের যাত্রা চ্যালেঞ্জ ছাড়া হয়নি। তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে আঘাত, বাধা এবং বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। ২০১৪ সালের, শৃঙ্খলা জনিত কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। এবং ২০১৯ সালে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল তাকে দুর্নীতির পদ্ধতির রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল।যাইহোক, এই ধাক্কা সত্ত্বেও, সাকিব তার খেলায় মনোনিবেশ করেছেন এবং তার পারফরমেন্স উন্নত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অনেক তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা , যারা তাকে আদর্শ হিসেবে দেখেন।
সাকিব একজনই আছে এই পৃথিবীতে। যার আর কোনো বিকল্প নেই। তাকে নিয়ে বললে শেষ হবে না। তার যত অর্জন ও কীর্তি টা বলে শেষ করার মতো না। তিনি জলন্ত এক নক্ষত্রের মতো উদিত সূর্য। যাকে ঘিরে আছে ক্রিকেটের যাবতীয় সৌন্দর্য।
উপসংহারে, বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে সাকিব আল হাসানের যাত্রা তার প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ়তার প্রমাণ। বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসা সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ও বিপত্তি অতিক্রম করেছেন। সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের ইতিহাসে তার স্থানকে শক্তিশালী করেছে তার ব্যতিক্রমী দক্ষতা দিয়ে। এবং তিনি ক্রিকেট বিশ্বের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
লেখক: বিধান চন্দ্র রায়
শিক্ষার্থী- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ , বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর